1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাতীয় পার্টিতে চ্যালেঞ্জের মুখে জিএম কাদেরের নেতৃত্ব

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৩ জানুয়ারি ২০২৪

জাতীয় পার্টিতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে জিএম কাদেরের নেতৃত্ব৷ নির্বাচনের ফলাফলের পর চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্ধ কর্মসূচি দিয়েছেন দলটির একাংশ৷

https://p.dw.com/p/4bClt
Bangladesch | Parteien | Jatiyo Party
ফাইল ফটো৷ছবি: Rashed Mortuza/DW

চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ছাড়াই রোববার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সভা ডেকেছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী পার্টির এমপি প্রার্থীরা৷ একদিন আগে এই সভার বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দিলেও এখন মহাসচিবের কন্ঠে নরম সুর৷ এই সভাকে তিনি স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন৷

এমন পরিস্থিতি জাতীয় পার্টি আরেক দফা ভাঙনের মুখে পড়তে যাচ্ছে কি না সেই প্রশ্ন উঠাও স্বাভাবিক৷ এর আগেও ৫ বার ভেঙেছে দলটি৷

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শনিবার চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দলের নেতাদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠক করেছেন৷ ওই বৈঠকে প্রেসিডিয়ামের অধিকাংশ নেতাই উপস্থিত হননি৷ এমনকি গুরুত্বপূর্ণ তেমন কোন নেতা সেখানে ছিলেন না৷

বিদ্রোহের বিষয়ে জানতে চাইলে মুজিবুল হক চুন্নু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা বিদ্রোহ না৷ দল ছেড়ে অনেকেই চলে যেতে পারেন৷ কিন্তু জিএম কাদের যেখানে থাকবেন সেটাই আসল জাতীয় পার্টি৷ আমি চুন্নু আলাদা দল করলে কী সেটা জাতীয় পার্টি হবে? হবে না৷’’

রোববার যে বৈঠক ডাকা হয়েছে সেটা কী আপনাদের অনুমতি নিয়ে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘না, আবার আলোচনাও করেছে৷ তারা তো আমাদের দলের নেতাকর্মী৷ ফলে করুক না আলোচনা৷’’

আগে তো হুশিয়ারি দিয়েছিলেন, এই সভা অগঠনতান্ত্রিক৷ এখন কী বলবেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘দলের স্বার্থে কখনো কখনো ছাড় দিতে হয়৷ সবকিছু কঠোরভাবে দেখা যায় না৷’’

দলের শীর্ষ দুই নেতাকে হুট করে অব্যহতি দেওয়া ঠিক হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘তারা হয়ত এমন কিছু করেছেন যা চেয়ারম্যান নিশ্চিত হয়েছেন৷ ফলে সেখানে ছাড় দেওয়ার সুযোগ ছিল না৷’’

দলের স্বার্থে কখনো কখনো ছাড় দিতে হয়: মুজিবুল হক চুন্নু

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল জাতীয় পার্টি৷ এর মধ্যে ২৬টি আসন ছাড় পেয়েছিল আওয়ামী লীগের কাছ থেকে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাশ করেছেন ১১ জন৷

এমন ফলাফলের পর গত বুধবার প্রথম বনানীতে পার্টি অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেন দলের নেতাকর্মীরা৷ বিক্ষুব্ধ নেতাদের ওইদিন পার্টি অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ সেদিনই চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের পদত্যাগের দাবিতে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন নেতারা৷ শুক্রবার সেই আল্টিমেটাম শেষ হয়েছে৷

ওই দিনই অর্থাৎ শুক্রবারই পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুনীল শুভ রায়কে অব্যাহতি দেওয়া হয়৷ দলীয় গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের এ অব্যাহতি দেন৷ এতে দলের ভেতরে ক্ষোভ আরও বেড়েছে বলে জানা গেছে৷

হঠাৎ করেই দল থেকে অব্যাহতিতে আশ্চর্য হননি কাজী ফিরোজ রশিদ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি মোটেও আশ্চর্য হইনি৷ আপনাদের থেকে আমি বিষয়টি জেনেছি৷ বিষয়টি ঠিক আছে৷ তিনি (জিএম কাদের) ভালো করেছেন৷ তবে এ মুহূর্তে আমি কিছুই বলবো না৷ অনুসন্ধান করলে সব বের হবে৷’’

হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত পার্টির চেয়ারম্যানের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ কি না জানতে চাইলে তিনি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি৷

ভোটে ভরাডুবির জন্য দলীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদের, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দায়ী করে এই তিন শীর্ষ নেতার পদত্যাগ দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা৷ পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, লিয়াকত হোসেন খোকাসহ অনেক সিনিয়র নেতা এই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন৷

এদিকে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি নির্বাচনে ‘ভরাডুবির' পর অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে আছেন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত রওশন এরশাদ-পন্থি নেতারা৷ এখন রওশন এরশাদ-পন্থিদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থীরা৷ তার মধ্যে জাপার অনেক কেন্দ্রীয় নেতাও আছেন৷

বনানী কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ চলাকালে বুধবার লিখিত বক্তব্যে পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা বলেন, ‘‘নির্বাচনে পার্টির চরম ভরাডুবি হয়েছে৷ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যনের সঙ্গে মনোনয়ন প্রশ্নে প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন৷ কিন্তু তিনি পার্টির মধ্যে বিভক্তি তৈরি হতে দেননি৷ অথচ পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের গত চার বছরে তার সাংগঠনিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা এবং অদক্ষতার কারণে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছেন৷ তারই প্রতিফলন ঘটেছে দ্বাদশ নির্বাচনে৷ পার্টির প্রার্থীদের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা করা এবং তাদের এক প্রকার পথে বসিয়ে দেওয়ার জন্য পার্টির দুই শতাধিক প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন৷ সরকারের কাছে ধরনা দিয়ে ২৬টি আসনে সমঝোতা করে সেখানেও ভরাডুবি হয়েছে৷ এ পরিস্থিতিতে পার্টির ঐক্য ধরে রাখতে জিএম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নুকে অবলিম্বে পদত্যাগ করতে হবে৷’’

এ সময় জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘‘৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি৷ আমরা প্রয়োজনে সাংগঠনিকভাবে নিয়মমাফিক কাউন্সিল আহ্বান করব৷ দলের চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ নেতাদের প্রসঙ্গে সাবেক এই এমপি বলেন, আমরা শুনেছি তারা টাকা-পয়সা নিয়েছেন৷ এটা সঠিকভাবে তদন্ত করে আমরা ব্যবস্থা নেব৷ দলই যদি সঠিক না থাকে, তা হলে আসন পেলাম কি পেলাম না, সেটা প্রশ্ন নয়৷’’

আবু হোসেন বাবলা ঢাকা-৪ আসন থেকে লড়াই করে হেরে যান৷ এই আসনে আওয়ামী লীগ ছাড় দেয়নি জাপাকে৷ 

বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে দল খবর নেয়নি৷ এ কারণে দলের প্রার্থীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে৷ আমরা রোববার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে বৈঠক করব৷ সেখানে চেয়ারম্যান বা মহাসচিব থাকবেন না৷ পরে আমরা এই ক্ষোভের কথাগুলো পার্টির সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনা করব৷ এটাকে আমি বিদ্রোহ বলছি না৷ আবার আমরা ভাঙন চাই না৷ যোগ্য নেতৃত্বে পার্টি আরও শক্তিশালী হোক সেটাই আমাদের চাওয়া৷ আপাতত এটুকুই৷’’

দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন জাপার কেন্দ্রীয় কয়েক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘জিএম কাদেরসহ বেশ কয়েকজন নেতা দলটিকে ধ্বংস করে দিয়েছে৷ এক পরিবার থেকেই জিএম কাদের নিজে, তার স্ত্রী-ভাগ্নেসহ অনেক আত্মীয়-স্বজন এবং কিছু চামচা এই সমঝোতার সংসদ সদস্য হতে চেয়েছেন৷ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীসহ অনেকের বিষয় তো আপনারা জানেন৷ এরা মিলেই তো দলকে শেষ করে দিয়েছে৷ এরা তো পার্টির চাঁদার টাকাও মেরে খায়৷ এই নির্বাচনে পার্টির নমিনেশন বিক্রি হয়েছে সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা৷ অনেক শুভাকাঙ্খী পার্টিতে টাকা দেয়, সেই টাকাও তারা মেরে খায়৷ এরা তো জাতির সাথেই বেঈমানি করেছে৷’’

নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে দল খবর নেয়নি: লিয়াকত হোসেন খোকা

জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচনে আমাদের যে বিপর্যয়টা হয়েছে, সেখানে তো আমাদের ব্যর্থতা আছে৷ পার্টির নেতারাও এর দায় এড়াতে পারেন না৷ আমাদের সঙ্গে জোটে যে সমঝোতা হল সেখানে আমরাও নির্বাচন করলাম, আবার আওয়ামী লীগের নৌকা না থাকলেও তাদের প্রার্থী থাকল৷ ফলে আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের পক্ষে কাজ করল না৷ অন্যদিকে আমরা সরকারের জোটে থাকায় বিরোধীদের কাছে ভোট চাইতে যেতে পারিনি৷ ফলে বিষয়টি আগেই পরিস্কার হওয়া প্রয়োজন ছিল৷ আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা যাওয়ার দরকার ছিল৷ ২০০৮ সালে বা ২০১৮ সালে তো আমরা সেভাবেই নির্বাচন করেছিলাম৷ ফলে যে বিপর্যয়টা হয়েছে সেখানে নেতাকর্মীদের ক্ষোভ থাকাটাই স্বাভাবিক৷ আমি মনে করি, পার্টির দায়িত্বশীল নেতারা তাদের সঙ্গে কথা বললে তাদের ক্ষোভ প্রশমন হবে৷''

হঠাৎ করেই সিনিয়র দুই নেতাকে অব্যহতি দেওয়াকে কীভাবে দেখেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, চেয়ারম্যানকে যারা বুদ্ধি দিয়েছেন তারা সঠিক বুদ্ধি দেননি৷ এই সিদ্ধান্তটা এভাবে না আসলেই ভালো হতো৷’’

প্রসঙ্গত, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের অবর্তমানে এবারই প্রথম দলীয় চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল দলটি৷ ২৮৩ আসনে প্রার্থী, ২৬ আসনে সমঝোতা হলেও নির্বাচিত হন দলের মাত্র ১১ জন৷

এর আগে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল হিসেবে ২৭টি আসনে জয় পেয়েছিল জাতীয় পার্টি৷ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জেনারেল এরশাদ প্রাথমিকভাবে অংশগ্রহণ করতে না চাইলেও শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের সাথে থাকতে হয়েছিল৷ এরপর সমঝোতার মাধ্যমে ২০১৪ সালে ২৯টি এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে ২২টি আসনে জয়লাভ করে দলটি৷ সে সময় দলটির নেতাদের অনেকের কথায় সেই সমঝোতা নিয়ে অস্বস্তি চাপা থাকেনি৷ তখন দলটিকে ঘিরে নানা ধরনের তৎপরতাও দেখা গিয়েছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য